-
অন ফটোগ্রাফি
সুজান সনটাগ এই গ্রন্থে তার সমকালের ইমেজ সংস্কৃতি, ইমেজ রাজনীতি এবং ইমেজ-মনস্তত্ত্ব কে বুঝতে নানা দিক থেকে এর ওপর আলো ফেলে দেখতে চেয়েছেন। বিশ শতকে, যখন দেখা বিষয়ক প্যারাডাইম পরিবর্তনের কাল মানব জাতির জন্যে, মানুষের দৃষ্টি গ্রাহ্যতা অভিজ্ঞতা এবং বোধের এক পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ক্রমাগত এই দৃষ্টিগ্রাহ্যতা দখল নিচ্ছে ব্যক্তি, সমাজ, বাস্তবতা, কামনা, বিবেক ও ভোগের-তখন অন ফটোগ্রাফি চিন্তাশীল মানুষকে দারুণ ভাবে উজ্জীবিত করতে পেরেছিল। অন ফটোগ্রাফিতে সনটাগ দেখিয়েছেন যে ফটোগ্রাফি নিজেই ইমেজের এমন এক প্রতিবেশ সৃষ্টিকরে যে, পৃথিবীর খণ্ডাংশগুলি তাদের প্রাসঙ্গিকতা এবং ইতিহাস থেকে স্থানচ্যুত হয়ে এক পরাবাস্তব দৃষ্টি গ্রাহ্যতায় পরিণত হয়।
-
তিনা মোদোত্তি শিল্প . রাজনীতি . জীবন
মৃত্যুর পর প্রায় চার দশক তিনা মোদোত্তি নামটি সর্বতোভাবে চাপা পড়ে থাকে। যা সর্বাংশে রাজনৈতিক, খানিকটা অবহেলারও। আশির দশকের গোড়া থেকে তিনা আবারও শিল্প-সংষ্কৃতি-রাজনীতির আলোচনায় ফিরে আসেন। ছেচল্লিশ বছরের আয়ুষ্কাল পেয়েছিলেন তিনা মোদোত্তি। এই অল্প সময়েই মঞ্চ ও চলচ্চিত্রাভিনেতা, আলোকচিত্রী এবং রাজনীতিক হিসেবে কর্মময় জীবন কাটিয়েছেন। ইতালিতে জন্মগ্রহণ করলেও, মেক্সিকোর শিল্প ও রাজনীতির ইতিহাসে তিনা অবিস্মরণীয়।
এই গ্রন্থটিতে তিনা মোদোত্তির বর্ণময় জীবন ও জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতা বা প্রভাবসঞ্চারক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ইত্যাদি কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপরই আলোকপাত করা হয়নি সচেতনভাবে। বরং নির্মোহ জায়গা থেকে তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে তুলে ধরা হয়েছে, বিস্মৃত একটি জীবনের দিকে ফিরে তাকালে যেভাবে দেখা হয়। -
দুই শিল্পীর চিঠি: পারস্পরিক-পারম্পরিক
উনিশ শতকের post-impressionist যুগের দুই দিকপাল শিল্পী ভিনসেন্ট ভান গখ ও পল গগ্যাঁ। ১৮৮৭ সালের শেষদিকে প্যারিসে দুজনের প্রথম দেখা হয়। এর পর থেকে শুরু হয় দুজনের পত্রালাপ। ক্রমে পরস্পরের সম্পর্ক গভীর বন্ধুত্বে রূপ নেয়। পরবর্তী সময়ে মহান শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেলেও জীবদ্দশায় দুজনের কেউই স্বীকৃতি পাননি। গগ্যাঁকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পীদের জন্য একটি commune গড়ে তুলতে ভিনসেন্ট খুবই উদগ্রীব ছিলেন। প্রথম পরিচয় থেকে শুরু করে সম্পর্ক গড়ে ওঠা, কিছুটা টানাপোড়েন এবং তা সত্ত্বেও দুজনের ভেতর এক অবিচ্ছেদ্য টান – চিঠিগুলো থেকে এমন এক গল্পের আভাস পাওয়া যায়। দুজনের বন্ধুত্ব যেন পরিণত হয়েছে কিংবদন্তিতে। এই সংকলনটির পাঠ পাঠকের আগ্রহ নিবৃত্ত করে না বরং এই দুই শিল্পীর জীবন সম্পর্কে আরো জানতে পাঠককে উৎসুক করে তোলে।
-
শিল্পতত্ত্বের গোড়ার পাঠ
শিল্প কী, এর মানে কী এবং কেন আমরা একে মূল্য দিই— এ বই এই সব নিয়ে লেখা। বিভিন্ন শিল্পতত্ত্ব এখানে খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। যেমন প্রথা তত্ত্ব, আঙ্গিক তত্ত্ব, অনুকরণ তত্ত্ব, প্রকাশ তত্ত্ব, অবধারণ তত্ত্ব, উত্তর-আধুনিক তত্ত্ব ইত্যাদি— কিন্তু ক্রমানুসারে নয়, বরং আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা অনুযায়ী।
কিন্তু ‘শিল্প’ কথাটা অনেক দেশে বা যুগে প্রযোজ্যই ছিল না। শিল্পীদের চর্চা এবং ভূমিকা বিস্ময়কর ভাবে যৌগিক ও অধরা। প্রাচীন এবং আধুনিক উপজাতির মানুষেরা শিল্পকে আর্টিফ্যাক্ট থেকে আলাদা করে দেখে না। মধ্যযুগীয় ইউরোপিয়ান খ্রিস্টানেরা ঠিক ‘শিল্প’ তৈরি করেনি, বরং ঈশ্বরের সৌন্দর্য অনুকরণ ও তা উদ্যাপনের চেষ্টা করেছিল। ধ্রুপদী জাপানি নন্দনতত্ত্বে উদ্যান, তলোয়ার, ক্যালিগ্রাফিক স্ক্রল অথবা টি সেরেমনির মতো বিষয়ও শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যা আধুনিক পশ্চিমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত।
প্লেটো-পরবর্তী অনেক দার্শনিকই শিল্প ও নন্দনতত্ত্ব বিষয়ক তত্ত্ব হাজির করেছেন। এখানে তাঁদের কয়েকজনকে বিশদ ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মধ্যযুগীয় মহীরুহ টমাস আকুইনাস, এনলাইটেনমেন্টের মুখ্য ব্যক্তিত্ব ডেভিড হিউম ও ইমানুয়েল কান্ট, কুখ্যাত প্রথাবিরোধী ফ্রিডরিখ নিটশে এবং বিশ শতকের জন ডিউই, আর্থার ডান্টো, মিশেল ফুকো এবং জাঁ বদ্রিয়ার। সমাজবিজ্ঞান থেকে শুরু করে শিল্প-ইতিহাস ও সমালোচনা, নৃবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, শিক্ষা এবং অন্যান্য শাখার তাত্ত্বিক, যারা শিল্প নিয়ে গবেষণা করেছেন, তাঁদের কথাও এখানে বলা হয়েছে।
বাংলা ভাষায় এ বইয়ের অনেক প্রসঙ্গ কখনও উত্থাপিতই হয়নি।