-
আয়না প্রথম অংশ
গালেয়ানো বলেছেন, “আমার বইগুলো, বিশেষ করে ‘মিররস’ লিখেছি এটা দেখানোর জন্য যে, বিশ্বের কোনো জায়গাই অন্য জায়গার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কোনো মানুষই অন্য মানুষের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দাবি করে না। বিশ্বকে যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারা আমাদের যৌথ স্মৃতিকে ছিন্ন করেছে, আমাদের বাস্তবতাকেও ছিন্ন করে চলেছে। প্রভাবশালী দেশগুলোকে শিখতে হবে, কীভাবে ‘নেতৃত্ব’ শব্দটা ‘বন্ধুত্ব’ দিয়ে বদলে ফেলা যায়।”
নিছক গল্প-বইয়ের বদলে এটি বিশ্ব-ইতিহাসের এক বিকল্প পাঠ। এর প্রতিটি গল্প নিয়েই গুরুগম্ভীর, রীতিমতো গবেষণামূলক দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখা যায়। গালেয়ানো হাঁটতে পারতেন সে পথে, যদিও তা কেতাবি মহলের বাইরে কেউ পড়ত না, পড়লেও মনে রাখত না। বদলে, তিনি পাঠককেই প্ররোচিত করেছেন গবেষণার পথে, এর প্রতিটি গল্পকে মনোযোগী পাঠক হয়তো বিভিন্ন সূত্রে যাচাই করে নিতে চাইবেন; যদি চান, সেখানেই লেখকের সার্থকতা।
-
আলিঙ্গনের বই
‘ভুলে যাওয়া স্বপ্ন’ গল্পে ক্লারিবেল তাঁর বান্ধবীর ভুলে যাওয়া স্বপ্নগুলোকে পুঁটুলি বেঁধে রেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর বাচ্চারা সে-জায়গাটা খুঁজে পেয়ে যাওয়ায়, নাজেহাল ক্লারিবেল বাধ্য হন বান্ধবীকে ফোন করতেন-“তোমার স্বপ্নগুলো নিয়ে করবটা কী বলো তো?” ‘আলিঙ্গনের বই’তে এদুয়ার্দো গালেয়ানো গল্প থেকে গল্পে লাফিয়ে যান পাহাড়ি ঝোরার উপর আলগা পাথরে পা ফেলে ফেলে। পাঠককে বারবার এক স্বপ্ন থেকে ঝাঁকিয়ে তুলে আরেক স্বপ্নের আবর্তে ঠেলে দিয়ে। এই বই পড়া মানে স্বপ্নের পুঁটুলি বানানো শুরু। লেখকের স্বপ্ন, পাঠকের স্বপ্ন, স্বপ্নের সময়, বাস্তবের সময় ঘেঁটেঘুটে এক হয়ে যেতে থাকে। নাজেহাল পাঠক যদি পারতেন গালেয়ানোকে ফোন করতেন-“আপনার স্বপ্নগুলো নিয়ে করবটা কী বলুন তো?” আর গালেয়ানো হয়তো তখন জানাতেন যে, মত অবস্থাটা আসলে খুবই একঘেয়ে, এবং জীবন-মৃত্যু নিয়ে একটা নতুন বই লিখতে তিনি উৎসুক-যেমন জানিয়েছিলেন কোর্তাজার, গালেয়ানোকে, আরেক স্বপ্নের ভিতর, বিচিত্র আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে।
-
ক-বাবুর যত কথা
বের্টোল্ট ব্রেখট ক-বাবুর এই সমস্ত ‘কথা’ লিখেছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে, গত শতকের বিশ থেকে পাঁচের দশক জুড়ে, বিপ্লব ও বিশ্বযুদ্ধের উত্তাল আবহে।
ক-বাবুর এ সমস্ত ‘কথা’ কখনও দু-এক লাইন, কখনও দু-এক অনুচ্ছেদেই শেষ। এ সবের মধ্যে কাহিনির আভাস থাকলেও বোঝা যায় যে লেখকের মূল লক্ষ্য কাহিনি বা আখ্যানের বর্ণনা নয়, বরং কোন ঘটনা বা আচরণ বা পরিস্থিতির চকিত ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ। সেদিক থেকে এ সবের ধরন প্রাচীন প্যারাবল বা নীতিসূত্রের মতো, কিংবা সংক্ষিপ্ত উপাখ্যান বা অ্যানেকডোটের মতো।
এর অধিকাংশেই কোন বিশেষ ঘটনা বা আচরণ বা বিষয়ের প্রেক্ষিতে ক-বাবু তাঁর নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন। ক্ষুরধার সে বক্তব্য, অতিরিক্ত একটা কথাও সেখানে নেই, এবং প্রায়ই তা প্রচল ধারণার বিপরীত মত ও পথের সন্ধানী। সঙ্গত অনুমান যে, ক-বাবুর বক্তব্য আসলে স্বয়ং লেখকেরই, ক-বাবু আসলে তিনি নিজেই।
রাজনীতি থেকে ঈশ্বর, প্রেম থেকে সত্যের স্বরূপ—সবই তাঁর আলোচ্য। ফলে দেশ-কালের গণ্ডিতে তা আটকে থাকে না। আর সে কারণেই এ সমস্ত কথা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। -
কবিতার কারখানা
আজ থেকে প্রায় অর্ধ-শতাব্দী কাল আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শ্রোতাদের অভিভূত করেছিল আর্হেন্তিনীয় সাহিত্যিক হোর্হে লুইস বোর্হেস-এর অভিভাষণ যা পরবর্তীতে হারিয়ে যায়। সেই হারিয়ে যাওয়া মহামূূল্য অভিভাষণটিই ফিরে এসেছে আমাদের কাছে অডিও টেপ থেকে লিখিত রূপে। এ যেন সাহিত্যের সাথে, ইংরেজি ভাষার সাথে বোর্হেসের সারা জীবনের প্রেমের গল্প। অকপট, সুরেলা, বুদ্ধিদীপ্ত ও রসবোধে পরিপূর্ণ এবং একই সাথে অসাধারণ পান্ডিত্যপূর্ণ এক কণ্ঠস্বরকে আমরা এই বইতে পাই যা বিংশ শতকের সবচাইতে চমকপ্রদ সাহিত্যিক কণ্ঠস্বরগুলোর একটি।
-
চেরির স্বাদ
সম্প্রতি [৪ জুলাই ২০১৬] না ফেরার দেশে চলে গেছেন মহান ইরানি চিত্ররূপকার আব্বাস কিয়ারোস্তামি। অসংখ্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি-সম্মানে সিক্ত এই নির্মাতা-তাঁর নিজেকে নিয়ে; তাঁর ছবি ও কবিতা নিয়ে; তাঁর হয়ে ওঠার সময় ও সমাজকে নিয়ে কথা বলেছেন নানা জনের সাথে নানা সময়ে নানা স্থানে। সে-কথামালা একত্রিত করে, তাঁরই ছবি ও কবিতায় গেঁথে দিয়েছেন গুণী ভাষাকারিগর সন্দীপন ভট্টাচার্য। ‘চেরীর স্বাদ’ গ্রন্থটি এক বর্ণিল, রূপবান কিয়ারোস্তামিকে একেবারে ভিতর থেকে জানার-বোঝার সুযোগ করে দেবে আমাদের।
-
পুণ্যাহ
আর দশটি সাধারণ নারীর জীবনের মতোই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ফারজানার জীবনের গল্প আবর্তিত হতে থাকে। অপ্রত্যাশিত বিপত্তি, অভাবিত মোড়, ধারণাবহির্ভূত অভিজ্ঞতা একের পর এক কড়া নাড়ছিল ফারজানার জীবন দুয়ারে। জীবনের এক পর্যায়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে বন্ধুত্বের সংস্পর্শে। শুধু কি বন্ধুত্ব? নাকি বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু? এখানে সংসারের অভ্যস্ততার খসড়া যেন চূড়ান্ত ক্লাইমেক্সে মোড় নেয়।
আপাত দৃষ্টিতে উপন্যাসের বিচ্ছিন্ন প্রত্যেকটি চরিত্র কীভাবে যেন মাকড়সার জালের মতো জড়িয়ে যায় পরস্পরের সাথে। এই চরিত্রগুলোর পরিণতি কী হবে? প্রাচী, মাহফুজ, ফারজানা, জোসেফ, শমিতা সবার জীবনে কি আসবে পুণ্যাহ?”