-
আয়না প্রথম অংশ
গালেয়ানো বলেছেন, “আমার বইগুলো, বিশেষ করে ‘মিররস’ লিখেছি এটা দেখানোর জন্য যে, বিশ্বের কোনো জায়গাই অন্য জায়গার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কোনো মানুষই অন্য মানুষের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দাবি করে না। বিশ্বকে যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারা আমাদের যৌথ স্মৃতিকে ছিন্ন করেছে, আমাদের বাস্তবতাকেও ছিন্ন করে চলেছে। প্রভাবশালী দেশগুলোকে শিখতে হবে, কীভাবে ‘নেতৃত্ব’ শব্দটা ‘বন্ধুত্ব’ দিয়ে বদলে ফেলা যায়।”
নিছক গল্প-বইয়ের বদলে এটি বিশ্ব-ইতিহাসের এক বিকল্প পাঠ। এর প্রতিটি গল্প নিয়েই গুরুগম্ভীর, রীতিমতো গবেষণামূলক দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখা যায়। গালেয়ানো হাঁটতে পারতেন সে পথে, যদিও তা কেতাবি মহলের বাইরে কেউ পড়ত না, পড়লেও মনে রাখত না। বদলে, তিনি পাঠককেই প্ররোচিত করেছেন গবেষণার পথে, এর প্রতিটি গল্পকে মনোযোগী পাঠক হয়তো বিভিন্ন সূত্রে যাচাই করে নিতে চাইবেন; যদি চান, সেখানেই লেখকের সার্থকতা।
-
ক-বাবুর যত কথা
বের্টোল্ট ব্রেখট ক-বাবুর এই সমস্ত ‘কথা’ লিখেছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে, গত শতকের বিশ থেকে পাঁচের দশক জুড়ে, বিপ্লব ও বিশ্বযুদ্ধের উত্তাল আবহে।
ক-বাবুর এ সমস্ত ‘কথা’ কখনও দু-এক লাইন, কখনও দু-এক অনুচ্ছেদেই শেষ। এ সবের মধ্যে কাহিনির আভাস থাকলেও বোঝা যায় যে লেখকের মূল লক্ষ্য কাহিনি বা আখ্যানের বর্ণনা নয়, বরং কোন ঘটনা বা আচরণ বা পরিস্থিতির চকিত ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ। সেদিক থেকে এ সবের ধরন প্রাচীন প্যারাবল বা নীতিসূত্রের মতো, কিংবা সংক্ষিপ্ত উপাখ্যান বা অ্যানেকডোটের মতো।
এর অধিকাংশেই কোন বিশেষ ঘটনা বা আচরণ বা বিষয়ের প্রেক্ষিতে ক-বাবু তাঁর নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন। ক্ষুরধার সে বক্তব্য, অতিরিক্ত একটা কথাও সেখানে নেই, এবং প্রায়ই তা প্রচল ধারণার বিপরীত মত ও পথের সন্ধানী। সঙ্গত অনুমান যে, ক-বাবুর বক্তব্য আসলে স্বয়ং লেখকেরই, ক-বাবু আসলে তিনি নিজেই।
রাজনীতি থেকে ঈশ্বর, প্রেম থেকে সত্যের স্বরূপ—সবই তাঁর আলোচ্য। ফলে দেশ-কালের গণ্ডিতে তা আটকে থাকে না। আর সে কারণেই এ সমস্ত কথা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। -
চলচ্চিত্র: চিন্তাবীজ
এ বইয়ে রয়েছে ‘নোটস অন সিনেমাটোগ্রাফি’-র সম্পূর্ণ অনুবাদ। ‘নোটস অন সিনেমাটোগ্রাফি’ ফরাসি চলচ্চিত্রকার রবের ব্রেঁস-র লেখা একমাত্র বই। দীর্ঘদিন ধরে ছোট-ছোট সূত্রের আকারে, বা আমরা যেমন বলেছি, প্রায় বীজের আকারে চলচ্চিত্র নিয়ে তাঁর ভাবনা এখানে নথিবদ্ধ করেছিলেন ব্রেঁস।
-
চেরির স্বাদ
সম্প্রতি [৪ জুলাই ২০১৬] না ফেরার দেশে চলে গেছেন মহান ইরানি চিত্ররূপকার আব্বাস কিয়ারোস্তামি। অসংখ্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি-সম্মানে সিক্ত এই নির্মাতা-তাঁর নিজেকে নিয়ে; তাঁর ছবি ও কবিতা নিয়ে; তাঁর হয়ে ওঠার সময় ও সমাজকে নিয়ে কথা বলেছেন নানা জনের সাথে নানা সময়ে নানা স্থানে। সে-কথামালা একত্রিত করে, তাঁরই ছবি ও কবিতায় গেঁথে দিয়েছেন গুণী ভাষাকারিগর সন্দীপন ভট্টাচার্য। ‘চেরীর স্বাদ’ গ্রন্থটি এক বর্ণিল, রূপবান কিয়ারোস্তামিকে একেবারে ভিতর থেকে জানার-বোঝার সুযোগ করে দেবে আমাদের।
-
দুই শিল্পীর চিঠি: পারস্পরিক-পারম্পরিক
উনিশ শতকের post-impressionist যুগের দুই দিকপাল শিল্পী ভিনসেন্ট ভান গখ ও পল গগ্যাঁ। ১৮৮৭ সালের শেষদিকে প্যারিসে দুজনের প্রথম দেখা হয়। এর পর থেকে শুরু হয় দুজনের পত্রালাপ। ক্রমে পরস্পরের সম্পর্ক গভীর বন্ধুত্বে রূপ নেয়। পরবর্তী সময়ে মহান শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেলেও জীবদ্দশায় দুজনের কেউই স্বীকৃতি পাননি। গগ্যাঁকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পীদের জন্য একটি commune গড়ে তুলতে ভিনসেন্ট খুবই উদগ্রীব ছিলেন। প্রথম পরিচয় থেকে শুরু করে সম্পর্ক গড়ে ওঠা, কিছুটা টানাপোড়েন এবং তা সত্ত্বেও দুজনের ভেতর এক অবিচ্ছেদ্য টান – চিঠিগুলো থেকে এমন এক গল্পের আভাস পাওয়া যায়। দুজনের বন্ধুত্ব যেন পরিণত হয়েছে কিংবদন্তিতে। এই সংকলনটির পাঠ পাঠকের আগ্রহ নিবৃত্ত করে না বরং এই দুই শিল্পীর জীবন সম্পর্কে আরো জানতে পাঠককে উৎসুক করে তোলে।
-
প্রেম ও হত্যা
‘প্রেম’ ও ‘হত্যা’ নিয়ে এই দুটি ছোট ছবি আদতে খ্রিস্তভ কিয়েসলোভস্কি পরিচালিত পোলিশ টেলিভিশনের জন্য তৈরি দশটি ছবির সিরিজ ‘ডেকালগ’-এর অন্তর্গত। তার মধ্যে এ দুটি ছবি (ডেকালগ ৫ ও ৬) একই সঙ্গে সামান্য পরিবর্তন সাপেক্ষে ‘আ শর্ট স্টোরি অ্যাবাউট লাভ’ এবং ‘আ শর্ট স্টোরি অ্যাবাউট কিলিং’ নামে স্বতন্ত্র দুটি কাহিনিচিত্র হিসেবেও নির্মিত হয়। এখানে প্রকাশিত দুটি চিত্রনাট্যই ঐ কাহিনিচিত্রের।
এই সংকলনে আরও আছে ‘ডেকালগ’ নিয়ে পরিচালকের দুটি সাক্ষাৎকার এবং আলাদা করে এ দুটি ছবি নিয়ে তাঁর বক্তব্য।
-
মেয়েদের হার মেয়েদের জিত
আমার বয়স যখন ছিল তিরিশ, তখন যদি কেউ বলত যে আমার নারী-সমস্যা নিয়ে লেখা উচিত, এবং আমার সমস্ত সিরিয়াস পাঠকই মেয়েরা, তবে আমি বিস্মিত হতাম, এমনকি বিরক্ত হতাম। শেষ পর্যন্ত যে তা-ই হল, এতে আমার কোনো অনুশোচনা নেই। খণ্ডিত, বিক্ষত যে-জগৎ তাদের অসুবিধার মধ্যে ফেলেছে, সেখানে তাদের জয় করার আছে অনেক লড়াই, পাওয়ার আছে অনেক পুরস্কার, যন্ত্রণার জন্যেও আছে অনেক পরাজয়-পুরুষদের যা নেই।
মেয়েদের আমি দেখতে শুরু করলাম নতুন দৃষ্টিতে, আর দেখলাম যে আমার জন্য সেখানে পর-পর একাধিক বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে। চল্লিশ পেরিয়ে জগতের এমন একটা দিক হঠাৎ আবিষ্কার করাটা যেমন আশ্চর্যের, প্রায় তেমনই উদ্দীপনার। তোমার দিকে সরাসরি সব সময়ে তাকিয়ে আছে তা, অথচ যা তুমি আগে কখনও খেয়াল করে দেখোনি। -
লোকশিল্পদর্শন
এ সংকলনের বিষয় হতে পারত লোকশিল্পের প্রকৃতি,
হতে পারত জীবন, হতে পারত নারী,
হতে পারত গৃহস্থালির দ্রব্য বা হাতের যন্ত্র।
এমনকী পোশাক, অবশ্যই অনুষ্ঠান, পট আর পুতুল।
এই সবই আমাদের লোকশিল্প-দর্শনে আছে।এই দর্শন শুধু তালিকা আর সমীক্ষা, ব্যাখ্যা আর বিশ্লেষণ,
বর্গীকরণ আর সংরক্ষণে নেই। বরং তা যেতে চায় তার মর্মে,
তার দর্শনে। শিল্পের এই মর্ম বা দর্শন বা তার আত্মা- তালিকা বা
সমীক্ষা, ব্যাখ্যা আর বিশ্লেষণ, বর্গীকরণ আর সংরক্ষণে কতটা থাকে?
এ সবের যে দরকার নেই তা নয়,
প্রাথমিক ভাবে খুবই দরকার- কিন্তু তার পর তা যেতে চায় তার
মর্মে, তার দর্শনে। সে পর্যায়ে আমাদের যাওয়ার সময় হয়েছে।
যাওয়ার পথে এই লেখাগুলি কাজে লাগবে।বস্তুত শিল্পের মর্ম থাকে তার অস্তিত্বে,
তার রঙরূপলাবণ্যে, তার বস্তুত্বে। না-দেখে, না ছুঁয়ে, না জড়িয়ে
বা সংক্ষেপে ভালোবেসে তার সঙ্গে ঘর না-করে
তাকে পাওয়ার উপায় নেই।এ সংকলনে লোকশিল্পের একদল আদত শিল্পপ্রেমিকের
ঐ ঘর করার অভিজ্ঞতাই আছে-তার মর্ম আছে, দর্শন আছে।