-
চলচ্চিত্রের রূপ-অরূপ
চলমান দৃশ্য-সংবেদ নিয়ে গদ্য। প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা, বিকল্প প্রকল্প, প্রযুক্তি-আলোচনা সিনেমা বিষয়ে। অথবা প্রান্তিকতা বনাম জাতীয়তা বিষয়ে প্রস্তাবনা চলচ্চিত্র বিষয়েই। তার সাধারণ আর বিশেষ অবভাষ নিয়ে যেমন লেখন তেমনি নির্দিষ্ট সৃজন বিষয়ে সাহিত্য। সংগঠন ভাবনার বিস্তার প্রিয় চলচ্চিত্রসংসদ আন্দোলন নিয়ে। আসলে চলমান দৃশ্যমানতাই তো এখন নিয়ন্তা দিনযাপনের। গদ্যসংগ্রহটি এসময়ের। তার প্রাসঙ্গিকতা সমকালীনতায়; তার পক্ষপাত অভিব্যক্তি রচনায়, চলচ্ছবিতে।
-
ডিজিটাল ইমেজ রাজনীতি, নন্দনতত্ত্ব ও অন্যান্য
প্রযুক্তি কি প্রভাবিত করে নন্দনতত্ত্বকে? শিল্পের ভাষা এবং তার রাজনীতি কি বিবর্তিত হয় প্রযুক্তির প্রভাবে? ইমেজের ডিজিটাল রূপান্তর কি প্রযুক্তির পালা বদল না কি প্যারাডাইম শিফট? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে এই বইয়ের সূচিপত্র গড়ে উঠেছে; ক্রমে। এই সময়ে আমাদের সম্পর্কগুলো—ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব এবং মহাবিশ্বের পরিধিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ভাষায় বর্ণিত হচ্ছে। তার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকাশ ডিজিটাল ইমেজে। এই ইমেজ মানুষের সৃষ্ট আগের সব ইমেজের চেয়ে ভিন্ন এভাবে যে, সে চূড়ান্তভাবে নমনীয়, পরিবর্তনীয় এবং সে ছাড়িয়ে যেতে পরে তার আদি স্রষ্টাকে এবং হয়ে পড়তে পারে প্রায় স্বয়ম্ভূ। ডিজিটাল ইমেজের প্রযুক্তি, নন্দনতাত্ত্বিক বাস্তবতা ও সম্ভাবনা, তার অ্যানার্কি আমাদের আগ্রহের বিষয়—এই গ্রন্থে।
-
প্রামাণ্যচিত্রকথা
প্রামাণ্যচিত্রকথা, চলচ্চিত্র-চিন্তার শুদ্ধতায় প্রত্যাবর্তনের চেষ্টাই আসলে। কেননা, প্রামাণ্যকরণ এক ধ্রুব, অনিরামেয় উপসর্গ চলচ্চিত্রের। বাস্তব, সত্য অথবা কল্পনার প্রামাণ্যকরণ। এই উপলব্ধিজাত এই গ্রন্থ, তার আয়োজন। প্রামাণ্যচিত্রের সত্য-যাত্রা, তার ইতিহাসের অ্যাডভেঞ্চার প্রযুক্তি বেয়ে তার সম্ভাবনার অসীম স্থিতিস্থাপকতা-এভাবে প্রামাণ্যচিত্রকথার শুরু। বিকল্প প্রকল্পে অথবা জাতীয় চলচ্চিত্রের ল্যান্ডস্কেপে প্রামাণ্যচিত্রের নির্ধারক ভূমিকা আর তারই স্বভাব-চলনে একালের বাংলাদেশের প্রামাণ্যচিত্র। এইসব তার কথা-প্রমাণ্যচিত্রকথা।
-
সভ্যতার সংকট ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
গত শতকের চল্লিশের দশক নাগাদ শব্দ যুক্ত হওয়ার এক দশকের মধ্যে চলচ্চিত্র একটি সাধারণ ভাষায় স্থিত হয়েছিল। সত্যজিৎ রায় সেই সব চলচ্চিত্রকারের অন্যতম যাঁরা এই সাধারণ ভাষায় তাঁদের চলচ্চিত্রকথা রচনা করেছেন। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি শুরু হয়ে প্রায় চার দশক ধরে নির্মিত হয়েছে ইমেজ-শব্দের এক ধনী ভাণ্ডার; সূক্ষ্ম সংবেদী চিত্রালাপ-ব্যক্তি আর সমাজ প্রসঙ্গে।
এখন, এই বছর, তাঁর জন্মশতবর্ষে পৌঁছে এইসব ছবি কি অতিক্রান্ত কোনো ধ্রুপদী নির্মাণ? আমরা, বাঙালিরা, উপমহাদেশের চলচ্চিত্রজন, কী সাজিয়ে রেখেছি এইসব আশ্চর্য সম্ভার আমাদের সন্তর্পণ কোনো চেতনে? যা হয় অনচ্ছ প্রেরণা এবং গর্বিত এক বোধ আমাদের চলচ্চিত্র-ইতিহাসের ভেতর থেকে উৎসারিত? না কি, সমকালের পাঠে তারা প্রাসঙ্গিক; প্রখর তারা রাজনীতি এবং ব্যক্তির বীক্ষণে; সামাজিক সংলাপে এবং ইতিহাস খননে? এইসব চিন্তা ক্রমাগত কাজ করে চলেছে এই গ্রন্থের হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায়।
সত্যজিৎ রায়ের গল্প আর সংলাপের নুয়ান্স, সূক্ষ্ম ডিটেইলের কাজ, তাঁর ভারসাম্যময় কম্পোজিশন, সংযমী সম্পাদনা নিয়ে প্রচলিত মুগ্ধ উচ্চারণের বাইরে এই চলচ্চিত্রপঞ্জি নিয়ে আর কোনো পঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে কি প্রবেশ করা যায়? পুঁজিবাদী বিচ্ছিন্নতা, আরবান গেরিলাযুদ্ধ, বিশ শতকের নতুন তরুণের লিবিডো অথবা নাগরিকদের নৈতিকতার সংকট নিয়ে তাঁর কাছে যাওয়া যায় কি? এসব খতিয়ে দেখতে দেখতে প্রায় তিরিশ বছর ধরে এই গ্রন্থের নির্মাণ। চেষ্টা করা গেছে সত্যজিৎ রায়ের ধ্রুপদী ঐশ্বর্য এবং কালাতিক্রমী প্রাসঙ্গিকতার এক কম্পোজিট পাঠ উপস্থাপনের।